গৃহপালিত সব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র জনপ্রিয় একটি পাখি ‘কবুতর’। বিগত কয়েক দশক আগেও কবুতর পালনের প্রচলন ছিল গ্রামে। তবে ইট-পাথরে ঘেরা জনবহুল শহরের ছাদে বা জানালার কার্নিশে এখন কবুতর পালনের দৃশ্য খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এটা পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।কবুতর পালনের ইতিবিত্ত, পালনের উপকারিতা, আর্থিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা, পালন পদ্ধতি, কবুতরের জাত, থাকার ঘর, কবুতরের খাবার, রোগব্যাধি- চিকিৎসা ও পালনের সতর্কতাসহ নানা দিক নিয়ে কবুতর খামারিদের সঙ্গে কথা বলে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে আকর্ষণীয় পর্ব।
কবুতর পালনের সুবিধা
কবুতর পালন করলে অসুবিধা নেই বললেই চলে, বরং সুবিধা অনেক। একজোড়া ভালো প্রজাতির কবুতর থেকে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক ব্যাপার নয়। তাই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, কবুতর লালন-পালনের খরচ খুব একটা নেই। এমনকি কবুতরের রোগব্যাধি কম হয়। কবুতরের থাকার জায়গা নির্বাচনে ও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না। এই কারণে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যই লাভজনক।
* সাধারণত একটি কবুতর বছরে কমপক্ষে ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম। এই ডিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বাচ্চা জন্মের পর ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে।
* কবুতরকে পোষ মানানো সহজ। কবুতর পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায়।
* কবুতর পালনে খুবই অল্প জায়গা দরকার হয়। এমনকি ঝোলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা যায়। কবুতর পোষায় খরচের পরিমাণ একেবারেই কম।
* কবুতর নিজের খাবার নিজেই খুঁজে খায়। তাই কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি খাবারের খুব একটা প্রয়োজন হয় না।
* কবুতরের জন্য খুব বাড়তি যত্নের দরকার হয় না। বাড়ির আঙিনা বা ছাদে কাঠের ঘর তৈরি করে সহজেই কবুতর পালন করা সম্ভব।
* কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা ফুটে। এই বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে। ফলে কবুতর প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের বংশধরের সংখ্যা।
*ধারাবাহিকভাবে কবুতর তার বংশবৃদ্ধি করে বলে অনেকেই আজকাল কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। মুরগির মাংসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে থাকেন।
কবুতর পালনের অপকারিতা
কবুতর পালন এর উপকারিতা থাকার পাশাপাশি অনেক অপকারিতাও রয়েছে। কবুতর পালন একটি ধৈর্যের ব্যাপার।কবুতর পালন করলে কবুতরের মলমূত্রে বাড়ীঘর নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। কবুতরের গলায় একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে।যদি পালন করা কবুতর কোনভাবে ঘরে এসে কোন খাবারে মুখ দেয় , তাহলে ওই খাবার বিষাক্ত হয়ে যায়।ছোট বাচ্চারা হঠাৎ ঐ খাবার খেয়ে ফেললে তাদের পেটে ভয়ংকর অসুখ হতে পারে।নিয়মিত কবুতরের ঘর পরিষ্কার করতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এছাড়া কবুতরের ঘরে নানা রকম পোকা মাকড় বাসা বাঁধতে পারে।পোকার আক্রমণ কেবলমাত্র কবুতরের বাসার মধ্যেই থাকে না বরং তা মানব বসতির মধ্যে প্রবেশ করে।ফলে মানুষের জন্য তার একটি অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।পাশাপাশি কবুতর পালনের জন্যে অনেক কষ্ট করতে হয়,- কবুতর দের নিয়মিত খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া, কবুতর এর ঘরের ময়লা পরিষ্কার করা ইত্যাদি। কবুতরের শরীর প্রাকৃতিকভাবেই খুব দুর্বল। সামান্য রোগ-ব্যাধি তে কবুতর মারা যায়। ফলে ব্যবসার উদ্দেশ্যে কবুতর কিনে আনলে যদি কবুতর কোন রোগ-ব্যাধি তে আক্রান্ত হয় তাহলে ব্যবসায় চরম লোকসান দেখা দেয়। কারণ অল্প প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি বলে কবুতর মারা যায়।এমনকি হালকা ঝড়-বৃষ্টিতে কবুতর আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনা।তাই কবুতর পালন করলে সুবিধা ও অসুবিধা দুটোর সম্মুখীন ই হতে হবে। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হল বিজ্ঞানসম্মত উপায় অবলম্বন করে কবুতর পালন করা।একজন অভিজ্ঞ কৃষকদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।শুরুতেই অত্যধিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা যাবে না বরং মাত্র দুটি কবুতর কিনে তা পালন করে লাভের পরিমাণ হিসাব করে ব্যবসার প্রসার করতে হবে
0 মন্তব্যসমূহ